,

জমির নতুন দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে

জানুয়ারিতেই কার্যকর

সময় ডেস্ক : আজিজুল ইসলাম পান্ন একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। চাকরিটা রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়ায় তাঁকে ঢাকায়ই থাকতে হচ্ছে। জীবনের বাকি সময়টা হয়তো চাকরির সুবাদে ঢাকায়ই কাটাতে হবে। এ কারণে কয়েক বন্ধু মিলে কিনেছেন ৯ শতাংশ জমি। অল্প কিছুদিন আগে এই জমি নিবন্ধন করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তাঁরা যে দামে জমি কিনেছেন সরকারি দাম তার চেয়ে কম। সরকারি মূল্যে জমি নিবন্ধন না করে যে দামে কিনেছেন তাঁরা সেই দাম উল্লেখ করেই নিবন্ধন করেছেন। শুধু আজিজুল ইসলাম পান্নুই নন, সারা দেশে যাঁরা স্থাবর সম্পদ হিসেবে জমি কেনাবেচার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁদের সবার কাছেই এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রয়েছে। তবে বিপরীত চিত্রও চোখে পড়ে। বেশি দামে জমি কেনাবেচা করলেও কেউ কেউ রাজস্ব ফাঁকি দিতে সরকারি মূল্যেই জমি নিবন্ধন করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে জমির যে মূল্য নির্ধারণ করা আছে তা চার বছর আগে করা। অবশ্য সারা দেশে জমির সরকারি মূল্য এক নয়। স্থান, শ্রেণি অনুযায়ী একেক জায়গায় একেক দাম। সরকারিভাবে মৌজাভিত্তিক জমির শ্রেণি হিসাবে দাম নির্ধারিত হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চার বছর আগে নির্ধারিত মূল্যে জমি বেচাকেনা চলতে থাকার কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তা ছাড়া কোনো কোনো এলাকায় সরকারি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে জমি বিক্রি হওয়ায় ক্রেতারা পড়ছেন বিপাকে। আবার কোনো কোনো এলাকায় সরকারি মূল্যের চেয়ে প্রকৃত মূল্য কম হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন বিক্রেতারা। এ কারণে সরকার নতুন করে জমির দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে। জমির মূল্য নির্ধারণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শহীদুল আলম ঝিনুকের স্বাক্ষরে এরই মধ্যে সারা দেশে সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোর উদ্দেশে আদেশ জারি করা হয়েছে। ওই আদেশে সংশ্লিষ্ট এলাকার জমির শ্রেণি অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রকে জানাতে বলা হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে জমির নির্ধারিত বাজারমূল্য ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে। বাজারমূল্য বিধিমালা সর্বশেষ সংশোধনী-২০১৫ অনুযায়ী ২০২১ ও ২০২২ সালের জন্য স্থাবর সম্পত্তির বাজারমূল্য নির্ধারণ অতীব জরুরি। সম্পত্তির সর্বনি¤œ বাজারমূল্য নির্ধারণ বিধিমালা ২০১০-এর সংশোধনী অনুসারে ২০২১-২২ সালের জন্য নির্ধারিত সর্বনি¤œ বাজারমূল্য চূড়ান্ত করে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এই কার্যালয়ে প্রেরণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’ এই আদেশ অনুযায়ী সারা দেশে জমির শ্রেণি অনুযায়ী অর্থাৎ নাল, কৃষি, ভিটা, ডোবা, বাগান, অকৃষি ইত্যাদিভাবে জমির মূল্য নির্ধারণ করা হবে। একটি নির্দিষ্ট এলাকার গত ২২ মাসের মধ্যে করা দলিলে সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ মূল্য যাচাই করে তার গড় ধরে নতুন দাম নির্ধারিত হবে। এ বিষয়ে নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শহীদুল আলম ঝিনুক কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতি দুই বছর অন্তর জমির মূল্য নির্ধারণের জন্য আইনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, কিন্তু গত চার বছর জমির বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। ২০১৬ সালে নির্ধারিত মূল্যেই জমির দলিল নিবন্ধন হচ্ছে। তিনি বলেন, বাজারমূল্য হালনাগাদ করা না হলে নানা ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। এ কারণে প্রতি দুই বছর পর পর জমির বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়। এসব বিবেচনায় সারা দেশে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শহীদুল আলম বলেন, এখন যে বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হবে তা ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এরপর যখন আবার বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হবে তখন ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্ট্রি এলাকায় নিবন্ধন করা সাফ কবলা দলিলে উল্লেখ করা মূল্যের ওপর সংশ্লিষ্ট মৌজার শ্রেণীভিত্তিক গড় মূল্য নির্ধারিত হবে। ঢাকা জেলার রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার কালের কণ্ঠকে বলেন, অধিদপ্তরের নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট সব সাবরেজিস্ট্রি অফিসকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাজারমূল্য নির্ধারণ করে তালিকা দাখিল করার জন্য। সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে তালিকা পাওয়ার পর তা চূড়ান্ত করে অধিদপ্তরেকে দেওয়া হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর